রেগে আগুন তেলে বেগুন

বছরের ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬০ দিনই আমার মাথা প্রচন্ড গরম থাকে। কোনো না কোনো কারণে আমি হামেশাই ক্ষেপে থাকি বলে আমার বন্ধু-পরিবারবর্গের মধ্যে শোনা যায়। এবং এই নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যেও কোনো রকমের দ্বিমত নেই বলেই জানা যায়। তবে যে হাতে গোনা পাঁচ কি দশ দিন মন-মেজাজ মসলিন শাড়ির মতন ফুরফুরে হয়ে থাকে, সেদিন আংটি কেন, নর্দমার পাইপ দিয়েও গলে যেতে পারি! স্বচ্ছন্দ্যে!

জীবনের বেশ কয়েকটা বছর পেরোবার পর নিজের সম্পর্কে কয়েকটা খুব পরিষ্কার ধারনা হয়েছে আমার। গবেষণা করে জেনেছি যে আমার মন-মেজাজ ভালো রাখার মাত্র দুইটি উপায়- ভালো খাওয়া আর চুটিয়ে গান শোনা। ভালো খেতে চাইলে তুলনামুলকভাবে সমস্যা কম। নিজেই রেঁধে খেয়ে নেওয়া যায় মর্জিমত। গান শোনার বেলাতেই যত ঝামেলা। ধরুন খুব ইচ্ছে হচ্ছে সলিল চৌধুরির গান শুনব। ইউটিউব খুললাম। কানে বাজছে, “তবু তুমি আশার দীপ জ্বেলে রেখো…বাতায়নে আ্মার পথ চেয়ে থেকো…” দুম করে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলল! আচ্ছা, এই গানটার অন্য আরো কত রকম ভার্সান আছে চেখে দেখি  তো! ব্যস! যত গন্ডগোলের শুরু। এক কবীর সুমনের কবেকার এই গান নিয়ে আলোচনার ভিডিও ছাড়া সারা ইউটিউব, টরেন্ট, মাইস্পেস ঘেঁটে এই গানের একটাও জুতসই নবায়ন-পরবর্তী রূপ পেলাম না। অথচ মেঘ না চাইতেই অ্যাসিড রেনের মতন চারদিক থেকে আমার দিকে ধেয়ে আসছে  100% লাভ এবং সেই গানের ছেষট্টি হাজার রকমের ভণিতা। গেল মাথা বিগড়ে। ফলাফল, সারাদিন মনে মনে খিস্তি সহকারে দুনিয়ার সমস্ত দুখী-রাগী গান শোনা।

সেদিন এক বন্ধু মান্না দে’র গলায় একটা গান খুঁজে না পেয়ে আমায় সাধলেন। সেই গানটা আমার কাছে ছিলনা। মাইরি বলছি, সারাদিন সমস্ত জগৎ খুঁজে সেই গান পেলাম না ঠিকই, তবে আশ্চর্যভাবে জিরাফের কলা খাওয়ার একটা ৩৯ মিনিটের ভিডিও পেলাম ইউটিউবে “মান্না দে” লিখে সার্চ করার পরেও। ধন্য ইন্টারনেট! তোমার গায়ে ইঁদুর বোলালে মার্ক্স- সক্রেটিস-প্লেটোকে অগুনতিবার ফুটবল খেলতে দেখা যায় কিন্ত সিলেটের শাহানা আখতারের প্রাণ-জুড়ানো গলায় ২টির বেশি গান শোনা অসম্ভব।

আমি এবং আমার মত কোটি কোটি মানুষ পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তে, নানা কারণঘটিত উত্তপ্ত মস্তিষ্ককে সান্ত্বনা দেন গান শুনে। প্রযুক্তিশক্তি যার কাছে আছে, সে হাত পাতছে ইউটিউবে বা সাউন্ডক্লাউডে। কেউ কেউ শান্তি পাচ্ছেন হয়ত বা। আবার গুটিকতক আমার মতন লক্ষ্মীছাড়ার দল দ্বিগুণ মাথা গরম করে ফিরে আসছেন রক্তচক্ষু নিয়ে।

বলি, বছরের ওই পাঁচ কি দশ মাথা ঠান্ডার দিনগুলিতে কিছু করতে পারেন তো, ভাইসাব! নাহয়  বাচ্চার লেবু খেয়ে চেতে ওঠার ভিডিও একদিন নাইবা আপলোড করলেন! আমাদের দেশে মদের দোকানের জন্যে সপ্তাহে একদিন “ড্রাই ডে” থাকে। সেইদিন তারা দোকানের ঝাপ বন্ধ করে রাখেন। হাজার পিড়াপীড়ি করলেও নো সোমরস!

প্লিজ কেউ একটা কাউকে একটা বলে সপ্তাহে একদিন ইউটিউবের ড্রাই ডে নির্ধারণ করুন না! একদিন একটু কম নেশা করলে আমাদেরও মঙ্গল, ইউটিউবেরও মঙ্গল!

লিভার সবারই একটা করে।

 

1 thoughts on “রেগে আগুন তেলে বেগুন”

  1. একটা সাইকেল কিংবা স্কুটি কিনে ফেল। খাওয়া আর গানের পরে এই একটা জিনিস মাথা ঠাণ্ডা করতে খুব কাজে দেয় আমার। এরপর ঢাকা এলে সারাদিন খাওয়া আর ঘোরার প্ল্যান করব। বুঝবি মজা।
    এবেলা এটা শোন। সাউন্ডক্লাউডে তোর গানই শুনছিলাম। রিকমেন্ডেশনে এটা পেয়ে গেলাম।

    Liked by 1 person

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান